মাহবুব আলম ◑
অসম্ভব মেধাবী ডা. মঈন উদ্দিন। বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে। তিনি ধারণ নতুন বাজার হাইস্কুল থেকে এসএসসি, সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন।
পরবর্তীতে বিসিএস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাতক হাসপাতালে যোগদান করেন। পরে প্রমোশন পেয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন।
এছাড়া তিনি মেডিসিন বিষয়ে এফসিপিএস, কার্ডিওলজি বিষয়ে এমডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
সিলেটে যোগদানের পর প্রতি শুক্রবার তার গ্রামের বাড়ি নাদামপুরে এলাকার রোগীদের জন্য ফ্রি চিকিৎসা সেবা চালু করেন। এছাড়া সিলেটে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতেন সেখানেও এলাকার লোকজনকে অনেকটা ফ্রিতেই চিকিৎসা সেবা দিতেন। অত্যন্ত ধর্মভীরু মেধাবী এই চিকিৎসক সেই থেকেই সর্বমহলে ‘গরীবের ডাক্তার’ হিসাবে পরিচয় লাভ করেন।
মঈন উদ্দিনের পিতা মুনসী আহমদ উদ্দিন ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। তার একমাত্র ছেলে সন্তান ছিলেন ডা. মঈন। তিন বোন রয়েছে ডাক্তারের। তার স্ত্রীও একজন ডাক্তার। ডা. মঈন উদ্দিনের দম্পত্তির দুই সন্তানও রয়েছে। ডাক্তারি পেশায় যোগদানের পর তিনি এলাকার মানুষদের ভুলে যাননি।
পল্লী চিকিৎসক পিতা মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন এলাকার অসহায় রোগীদের যেন নিয়মিত সেবা দেন ছেলে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পল্লী চিকিৎসক বাবার কথা রেখেছেন ডা. মঈন উদ্দিন। প্রতি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে এলাকায় ছুটে আসতেন। বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও করেছেন তিনি। এমন মানবিক মানুষ মানুষের সেবা করতে গিয়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে মারা গেছেন।
এলাকার হিন্দু মুসলিম সবাই এমন মৃত্যুর খবরে মর্মাহত হয়েছেন। তাদের অনেকেই মৃত্যুসংবাদ শুনে অঝোরে কেঁদেছেন।
এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আছকির মিয়া বলেন, ‘এলাকার অসহায় হিন্দু-মুসলিম সবাই ডা. মইনুদ্দিনের কাছ থেকে বিনামূল্যে সেবা পেয়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এসে তিনি এলাকার রোগীদের চিকিৎসা দিতেন। বিনা ফিতে দেখা দরিদ্র রোগীদের কম্পানি প্রদত্ত ওষুধও বিলিয়ে দিতেন।’
এলাকার মুরুব্বী সোহেল আহমদ বলেন, ‘ডা. মঈনুদ্দিন শুধু গরিবের ডাক্তার ছিলেন না। এলাকার কোন রোগী তার সিলেট চেম্বারে গেলেও তিনি তাদের ফ্রি দেখতেন। মানুষের সঙ্গে এমন ভালো ব্যবহার করতেন যাতে রোগীর রোগ অধেক কমে যেতো। মানুষের সেবা করতে গিয়েই মানুষ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। এমন মানুষের মৃত্যু নেই। তার কর্মেই তিনি বেচে থাকবেন।’
ডাক্তার মঈন উদ্দিনের গ্রামের বাসিন্দা গিরিধর দাস বলেন, ‘ডা. মঈন উদ্দিন ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। গরিব মানুষকে তিনি বিনামূল্যে সেবা দিয়ে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে মানুষ কাঁদছে।’
উল্লেখ্য, সিলেটে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন আজ বুধবার (১৫ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৪টায় ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
গত ৫ এপ্রিল তার শরীরে করোনা রোগ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎকদের পরামর্শমতে তিনি বাসায় কোয়ারেন্টিন অবস্থায় চিকিৎসা নিতে থাকেন।
তার শরীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে ৭ এপ্রিল তিনি নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হন। ৮ এপ্রিল সেখান থেকে পরিবারের ইচ্ছায় চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া হয়।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত সোমবার হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সূত্র: সিলেটভিউ২৪
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-